অটিজম কি? অটিজমের ছয়টি লক্ষণ ও চিকিৎসা

গবেষনা বলছে, অটিজমে আক্রান্ত ১৭ জনের ১৬জনই পুরুষ; নারীদের রোগ নির্ণয়ে বাধা কোথায়? তাহলে সেইসব নারীরা কোথায়? "প্রচুর সংখ্যায় অটিস্টিক নারী ও মেয়ে-শিশুকে দেখা যায় শান্ত, লাজুক এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের হয়ে থাকে" "এই শান্ত মেয়েদের সমস্যাগুলো অন্য মানুষদের কাছে 'অদৃশ্যমান' থেকে যেতে পারে"

Must Read
SmileMaghttps://smilemag.net
SmileMag | Net is designed for business development; news, smile, inspire, success, motivate, encourage with relationship and saving money and time. Be smiles, be happy

অটিজম শিশুর সংখ্যা বর্তমানে ক্রমাগত বাড়ছে। এর সাথে পরিবেশ দূষণের একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা অভিমত দিয়েছেন। অটিজম আক্রান্ত শিশুর বয়সের সাথে স্বাভাবিকভাবে মেধার বিকাশ ঘটে না। তাই তাদের জন্য ভিন্নধর্মী পরিচর্চা ও সেবা দরকার। অটিজম এর উপর একটি সুন্দর ইনফোগ্রাফিক পেলাম। ভাবলাম সবার সাথে শেয়ার করি।

অটিজম কি?

অটিজম একটি জন্মগত সমস্যা যা পরবর্তীতে মানসিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে ,মায়ের গর্ভে মস্তিস্কের বৃদ্ধি বা পূর্নতা লাভ বাধাগ্রস্থ হলে শিশুদের অটিজম দেখা দেয়। সাধারনত অটিষ্টিক শিশুদের বুদ্ধিমত্তা খুবই কম থাকে।

কিছু কিছু অটিষ্টিক শিশু গনিত, সংগীত বা ছবি আকায় অত্যন্ত পরদর্শী হয়। প্রতি হাজারে ২/১ জন অটিষ্টিক শিশু জন্মগ্রহন করে।ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে অটিজম হবার সম্ভবনা মেয়ে শিশুদের ৩ থেকে ৪ গুন বেশী।সাধারনত শিশুর ১৮ মাস থেকে ২ বছর বয়সের সময় থেকে বাবা মা বুঝতে পারেন যে শিশুটি স্বাভাবিক নয়। অটিজম আক্রান্ত শিশু ,অটিষ্টিক শিশুর খিচুনি হতে পারে।

শিশুদের মানসিক রোগ নিয়ে বাংলাদেশের কিছু অদ্ভুত ধারনা

শিক্ষানবিসদের উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র শতকরা ৪০ জন মনে করে শিশু মানসিক রোগে ঔষধ ব্যবহার করা যায়। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে শ্রদ্ধেয় একজন অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ তার বক্তৃতা শুরু করেন এভাবে—

“পাগল হচ্ছে দুই প্রকার- বড় পাগল ও ছোট পাগল (তিনি অটিস্টিক শিশুকে বোঝাচ্ছেন); বড় পাগলের চিকিৎসা সহজ, কিন্তু ছোট পাগলের কঠিন”। এই হচ্ছে দেশে মানসিক রোগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির নমুনা। সংগতকারনেই তাঁর নামটি এখানে দেয়া হলোনা।

অনেক শিক্ষিত মানুষের মতে অটিজম মানসিক রোগ না– । সবচেয়ে মজার বিষয় অটিজম নির্ণয়ের যে বৈজ্ঞানিক মানদন্ড তা অ্যামেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন এর তৈরি করা মানসিক রোগের শ্রেণীবিন্যাস (DSM-IV TR) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক রোগের শ্রেণীবিন্যাসের (ICD-10) মানসিক রোগ শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত।

যদিও অটিজম একটি স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা (Neurodevolpmental), তাদের শিশু মানসিকরোগ হওয়ার সম্ভাবনা অন্য শিশুদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ জন্য তাদের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তার প্রয়োজন হয়। একথা সবাই জানেন বিশেষত অভিবাবকগণ যারা ভুক্তভোগী।

বৈশিষ্ট্যে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্য অটিজম একটি বহুল আলোচিত বিষয় এখন সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। অটিজম হলো শারীরিক অথবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মতো জৈবিক সমস্যা। অনেক সময় এটাকে মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়বিক সমস্যা, যেখানে সামাজিক কথা আদান-প্রদান, আচরণ এবং বুদ্ধিসম্পর্কিত সমস্যা থাকে বলেও চিহ্নিত করা হয়।

অটিস্টিক শিশুরা দেখাশোনা এবং শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়াতে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। অটিজম শিশুর অনুভূতি রেজিস্ট্রেশন, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহারে বুদ্ধিগত সমস্যা দেখা যেতে পারে।

অটিজম এর কারন কি?

অটিজমের প্রধান কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অটিজমের কারন সম্পর্কে এখনও কোন নির্দ্দিষ্ট বিষয় চিন্হিত করা যায়নি। ধারনা করা হয় জেনেটিক কারনে অটিজম হয়ে থাকে। এছাড়াও ধারনা করা হয়

  • খাদ্যাভাস
  • পরিপাক তন্ত্র্রের সমস্যা
  • পারদ এর বিষক্রিয়া
  • ভিটামিন এর অভাব
  • গর্ভাবস্থায় মায়ের হাম হওয়া

শিশুদের দেয়া MMR ভ্যাকসিনের কারনে অটিজম হয়
কিন্তু এগুলির কোনটাই প্রমানিত নয়। অটিজমের কারন চিন্হিত করার জন্য গবেষনা এখনও চলছে।

অটিজম এর বৈশিষ্ট্য কি কি?

অটিজম এমন কিছু সমস্যামণ্ডিত একটি কন্ডিশন যার ওপর স্বচ্ছ জ্ঞান না থাকলে মা-বাবা বা লালন পালনকারীর জন্য সেই বাচ্চাকে নিয়ন্ত্রণ করা বা দেখাশোনা করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। শিশুদের শুধু আচরণগত সমস্যাগ্রস্তকেই আমরা অটিজম বলতে পারি না।

একজন অটিজম শিশুর মধ্যে সাধারণত পাঁচটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সেগুলো হলো-

(১) অটিজম শিশুর ব্যক্তি এবং বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝতে সমস্যা হবে।

(২) কথা বিনিময় বা আদান-প্রদানে সমস্যা থাকবে। (৩) তাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া বা চলাফেরায় সমস্যা থাকবে।

(৪) তাদের শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি বা বিকাশে বিশৃঙ্খলা থাকবে।

(৫) তাদের যে কোনো অনুভূতিতে সঠিক সাড়া দেওয়া বা ক্রিয়াকলাপে সমস্যা থাকবে।

এই পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছাড়াও তাদের মধ্যে আরো অনেক রকমের বৈশিষ্ট্যও পাওয়া যেতে পারে।

অটিজম শিশুর অধিকার

একজন অটিজম শিশুরও রয়েছে সাধারণ শিশুর মতো অফুরন্ত সম্ভাবনা, যদি তাকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। কোন শিশুর অদ্ভুত কান্ড দেখে বিরক্ত হয়ে কিছু বলার আগে একবার জেনে নিন শিশুটি অটিস্টিক কিনা।

আপনার একটি কথা থেকেও তাঁর বড় ধরনের মানসিক সমস্যা শুরু হতে পারে। আমাদের দেশে অনেকেই সামজিক লজ্জার ভয়ে তাঁর শিশুর অটিজমের কথা বলেন না, তারা ভাবেন লোকে তাঁর শিশুকে পাগল বলতে পারে।

এই ধারনা পুরাপুরি অমুলক নয়। আবার আনেকেই জানেন না যে তাঁর শিশুটি অটিজম আক্রান্ত। তাই আসুন আমরা সকলে একসাথে কাজ করি-দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও বিবাদ ভুলে আলোকিত শিশুর নির্মল হাসির জন্য ।

অটিজম কি এবং শিশুর ৬টি প্রধান সমস্যা

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের যে অটিজম ছিল তা হয়ত আমরা অনেকেই জানি। এ কারনে অনেকে মনে করেন অটিজম আক্রান্ত শিশুরা হয়ত অতি মাত্রায় মেধাবী হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দৈনন্দিন অনেক কাজকর্মেই অটিস্টিক শিশুরা অন্যের উপর নির্ভরশীল।

এ কারনে অটিস্টিক শিশুদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকা জরুরি। কেননা যথাযথ সহযোগিতা, সমর্থন ও শিক্ষা পেলে অটিস্টিক শিশুরাও পরিণত বয়সে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে সক্ষম। চলুন অটিস্টিক শিশুদের ছয়টি সমস্যার কথা জেনে নেই-

১. ইন্দ্রিয়গত সমস্যা:

অটিজম থাকা অনেক শিশুই দেখা, শোনা, গন্ধ, স্বাদ ও স্পর্শের প্রতি অতি সংবেদনশীল অথবা প্রতিক্রিয়াহীন থাকতে পারে।

২. ঘুমের সমস্যা:

অটিস্টিক শিশুদের ঘুম আসা, ঘুমিয়ে থাকা বা ঘুম সম্পর্কিত অন্যান্য সমস্যা থাকে। এ কারনে তাদের মনোযোগ ও কাজের সক্ষমতা কমে যায় এবং আচরণেও এর প্রভাব পড়ে।

৩. বুদ্ধি-প্রতিবন্ধীতা:

অনেক অটিস্টিক শিশুর মাঝেই অল্প মাত্রায় হলেও বুদ্ধি-প্রতিবন্ধীতা পরিলক্ষিত হয়।

৪. খিঁচুনির সমস্যা:

সাধারণত এ ধরনের শিশুদের প্রতি চারজনে একজনের খিঁচুনি সমস্যা হয়। কারো খিঁচুনি শুরু হয় শৈশবে, কারো বা কৈশোরে।

৫. পেটের সমস্যা:

অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকগণ প্রায়ই তাদের বাচ্চাদের হজমের অসুবিধা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের গ্যাস, বমি বা ব্লোটিং (bloating) এর অভিযোগ করে থাকেন।

৬. মানসিক অসুস্থতা:

গবেষণায় দেখা যায়, অটিজম থাকা শিশুদের মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকি বেশী। এদের বিষন্নতা, উদ্বিগ্নতা ও মনোযোগে ঘাটতিসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে।

অটিজম কি এর চিকিৎসা

শিশুর এ ধরনের সমস্যা আছে বলে মনে হলে অনতিবিলম্ব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অথবা শিশুকে অটিজম বিষয়ক প্রাক-প্রাথমিক সেবাদানকারী সংস্থায় নেয়া যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় অটিজম নির্ণয় করতে পারলে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে অটিজম এর ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়াগুলো অনেক সফলভাবে মোকাবেলা করা যায়।

কি কি পরিচর্যা গ্রহন করা যেতে পারে?

নিবিড় ব্যবহারিক পরিচর্যা (intensive behavioral therapy), স্কুল ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসুচি, সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও যথাযথ ওষুধের ব্যবহার একটি শিশুর অটিজমের সমস্যাগুলো অনেকাংশে হ্রাস করে। সর্বাপরি যথাযথ সচেতনতা সৃষ্টি হলে অটিস্টিক শিশুদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত হবে এবং এটা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।

অজ্ঞতার কারণে এবং সঠিক জায়গায় চিকিৎসা নিতে না পারায় বাচ্চার বয়স বেড়ে যায় এবং সমস্যাগুলো আরো অনেক জটিল হতে থাকে। এক পর্যায়ে নিজেকে এবং অন্যকে আক্রমণ করার প্রবণতা, ভাঙচুর করার প্রবণতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন আরো অনেক রকমের অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। যা পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে প্রাক চিহ্নিতকরণ এবং ব্যবস্থাপনা অটিজম শিশুর আরোগ্যের মূল চাবিকাঠি। সাধারণত অটিজমের প্রধান পাঁচটি বৈশিষ্ট্যই এর শনাক্তকরণের বড় উপায়।

যেহেতু অটিজমের একক কোনো বিশেষ কারণ নেই তাই এর আরোগ্য কোনো সহজ কাজ নয়। একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি দরকার। যার মধ্যে থাকবে ওষুধ, থেরাপি, বিশেষ শিক্ষা, খাবার ব্যবস্থাপনা, ভিটামিন, এনজাইম এবং হরমোন পরামর্শ ইত্যাদি। অকুপেশনাল থেরাপি: অকুপেশনাল থেরাপিস্ট অটিজম বাচ্চার সমস্যাগুলো বের করে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করেন এবং শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করেন।

চিকিৎসার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করেন বিভিন্ন উপায়, যেমন- সেনসরি ইন্টিগ্রেশন থেরাপি, শারীরিক ব্যায়াম, বিভিন্ন উদ্দেশ্যমূলক কাজ, বুদ্ধি বিকাশের কাজ, কথার চিকিৎসা, বিভিন্ন রকম কার্যকরী যন্ত্রপাতির ব্যবহার, দৈনদিন কার্যাবলির অনুশীলন, খাবার অনুশীলন, চাহিদা অনুযায়ী শিশুর সঠিক কাজের পরিবেশ ডিজাইন করা ইত্যাদি।

অকুপেশনাল থেরাপিস্ট লজিস্টিক অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে কাজ করে থাকেন, যা অটিজম শিশুর জন্য খুবই জরুরি। যেহেতু অটিজম একটি আলোচিত বিষয় তাই আমরা আমাদের সমাজ, ডাক্তার এবং শিক্ষক মহলকে মুখ থেকে কানে, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে, ওয়ার্কশপ, সেমিনার, র‌্যালি, লিফলেট এবং সমাজের রিসোর্স পার্সনদের অবহিতকরণের মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারি।

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img
Latest News

টি-টোয়েন্টিতে টি-টেনের দারুণ ভূমিকা দেখছেন ভারতীয় তারকা

স্পোর্টস ডেস্ক: রোমাঞ্চকর ফাইনালের মধ্যে দিয়ে পর্দা নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের মাস্টার্স টি-টেন টুর্নামেন্টের। গত রোববার ফ্লোরিডায় ফাইনালে মিসবাহ-উল-হকের নিউ ইয়র্ক ওয়ারির্সকে...
- Advertisement -spot_img

More Articles Like This

- Advertisement -spot_img